-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
বিজয় মিছিল করে কার্যালয়ে যাবেন খালেদা জিয়া
আদেশে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন তাকে মুক্তির আদেশ দেন। গণআন্দোলনে সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন বাহিনী প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের গত সোমবারের বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পরে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেই জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘সর্বসম্মত’ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়েছে এবং ইতিমধ্যে অনেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে সেখানে জানানো হয়েছে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর গত চার বছরে খালেদা জিয়াকে বিভিন্ন সময়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হয়েছে। দিনের হিসাবে যা প্রায় ২৬০ দিন। আর কারাবন্দির পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় বছরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং এভারকেয়ার হাসপাতাল মিলিয়ে খালেদা জিয়া দেড় বছরের বেশি সময় হাসপাতালে থেকেছেন। সবশেষ গত ৮ জুলাই ভোর ৪টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই থেকে হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনি।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যেতে হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। করোনাভাইরাস মহামারির শুরুতে তার পরিবারের আবেদনে সরকার নির্বাহী আদেশে দুই শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। তার ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক নিয়মে হচ্ছে। স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলো সঠিক মাত্রায় রয়েছে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন সদস্য মঙ্গলবার রাতে সময়ের আলোকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ম্যাডাম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। উনার অবস্থার স্বাভাবিক। ডায়বেটিস-প্রেশার স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে। তার নতুন নতুন পরীক্ষা করে ওষুধে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কবে নাগাদ বাসায় ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রুতই। উন্নত চিকিৎসার জন্যও দেশের বাইরে যেতে পারবেন এখন।
এই দফায় লিভারের সমস্যাসহ আরও কিছু সমস্যা নতুন করে দেখা দিয়েছিল। এগুলো কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে। উনার বয়সটাও বড় ফ্যাক্টর। লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি। এটি বাংলাদেশে সম্ভব নয়। বিদেশের যেকোনো মাল্টিপুল ডিজিস সেন্টারে নেওয়া প্রয়োজন। বোর্ড বরাবরই এটি সুপারিশ করছে। ম্যাডামের পরিবারও চেষ্টা করছেন।
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি সোমবার রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান কবে দেশে ফিরছেন জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা আমাদের অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাআল্লাহ।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার সময়ের আলোকে জানান, তিনি সোমবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন হাসপাতালে। আজ মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কবে রিলিজ পাবেন। ছাত্র-জনতার বিজয় ও দেশের পরিবর্তিত অবস্থা দেখে তিনি স্বস্তিবোধ করেছেন। উনার অভিব্যক্তি তাই মনে হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির খবরে নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার দল ক্ষমতায় আসে। ওই বছরই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হলে তিনি পঞ্চম সংসদে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ওই বছরে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। তিনি হন প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। ২০০১ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব হারায়। খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৮টি সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করে সবকটিতেই জয়লাভ করেন।