সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

সাফারি পার্কে বিকল টুরিস্ট বাসের এসি, জানালা খুললেই বিপদ

গাজীপুরে সাফারি পার্কে হিংস্র প্রাণী থাকায় পর্যটকবাহী বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করেই ভ্রমণের নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ বাসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসি বিকল থাকায় দর্শনার্থীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। বাসে ছোট ফ্যান লাগালেও তা পর্যপ্ত নয়। ফলে গরমের যন্ত্রনা এড়াতে পর্যটকদের অনেকেই বাসের জানালা খুলেই বাঘ, সিংহ, ভালুকসহ হিংস্র প্রাণিদের বিচরণ উপভোগ করছেন।

এতে যে কোন সময় আনন্দভ্রমন করতে আসা পর্যটকরা বড় ধরণের অঘটনের শিকার হতে পারেন বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।

পার্কের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য ৭টি বাসের ৫টির এসি বিকল হয়ে আছে। বিকল্প হিসেবে কয়েকটি বাসে ছোট ফ্যান যুক্ত করলেও তা অপর্যাপ্ত। ফলে বাসে চড়ে গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকরা অনেক সময় বাসের জানালা খুলে দিচ্ছেন। তাতে আনন্দ-ভ্রমণের সময়ও চালক-পর্যটকদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিন (১ এপ্রিল) পার্কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কটির কোর সাফারির বাঘ-সিংহ-ভালুক বেষ্টনীতে প্রবেশ করতে রওনা হয়েছে পর্যটকবাহী একটি বাস। বেষ্টনীতে প্রবেশ করার আগেই চালক হ্যান্ড মাইকে দর্শনার্থীদের বাসের জানালার বাইরে হাত বা মাথা বের না করার জন্য সতর্ক করে দিচ্ছেন।

কিন্তু এসি বিকল থাকায় বাসটি চলার কিছুক্ষণের মধ্যে অভিভাবকদের সঙ্গে আসা শিশুরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে রিক্স নিয়েও অনেকে বাসের জানালার কাঁচ খুলে দেন। তারা বাস চালকের কথা কর্ণপাত করেনি। বাসটি হিংস্র ওইসব প্রাণীর বেষ্টনীতে ঢুকলেও জানালা বন্ধ করেননি তারা। কিছু পর্যটক আবার অনেকে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে হাত বের করেই ক্যামেরা/মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলছিলেন।

এরআগে একবার গাজীপুর সাফারি পার্কের টাইগার রেস্টুরেন্টে বসে এক পর্যটক তার সঙ্গীদের বাঘ বেস্টনীতে থাকা একটা বাঘের অবস্থান দেখাতে জানালার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে বাইরে হাত বের করেন। কিন্তু সবার অগোচরে এসময় টাইঘার রেস্টুরেন্টের জানালার নিচে খাদের পানিতে থাকা একটি বাঘ ছুটে গিয়ে ওই পর্যটকের হাতের কব্জি ছিড়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে ওই রেস্টুরেন্টের বাইরে নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করা হয়। কিন্তু বাসের জানালা এভাবে খোলা রাখলে যেকোন সময় আবারও বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে পার্ক কর্তৃপক্ষের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্কেও এক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর আগে কেনা আটটি বাসের মধ্যে ৫টি বাসেরই এসি বিকল রয়েছে, তাই নিষেধ করার পরও অনেক সময় বাসের জানালার কাঁচ খুলে দিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া একটি বাস গত বছরের ৫ আগস্টে সন্ত্রাসী হামলায় ভাংচুরের পর গেরেজে পড়ে আছে। এখন ৭টি বাসই চলাচল করছে। এসব বাসের কয়েকটিতে ছোট ফ্যান লাগানো হলেও তা অপর্যাপ্ত। তাই গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পর্যটক মাঝে-মধ্যেই বাসের জানালা খুলে ফেলছে।

গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহ থেকে পার্কে বেড়াতে আসেন গৃহবধূ সালমা বেগম। তিনি জানান, তারা শিশু সন্তানসহ ৫ জন পার্কে ঘুরতে এসেছেন। “কোর সাফারি পার্কে জন্তু দেখতে বাসে উঠে দেখি, তাতে এসি সচল নেই; পরে জানতে পারি এসি নষ্ট। কিছুদূর চলার পর গরমে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এক সময় আমার সঙ্গে থাকা শিশুসন্তানও গরমে কান্না শুরু করে। এ অবস্থায় বাসের জানালা খুলে দিলে তার কান্না থামে। জানালা দিয়ে কান্নার শব্দ বাইরে গেলে শুয়ে থাকা বাঘ/ সিংহ কান পেতে শুনে এবং শব্দের উৎস খুঁজে। এ এক ভয়ংকর দৃশ্য। তখন গরম লাগলেও পর্যকটকরা বাধ্য হয়েই আবার জানালা বন্ধ করে দেয়।

“টাকা দিয়ে টিকেট কেটেও উৎকণ্ঠা আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আনন্দ ভোগ করতে হয়েছে।” একই কথা জানালেন জামালপুরর সরিষাবাড়ি এলাকা থেকে পার্কে ঘুরতে আসা আসমা উল হোসনা ডেইজি নামের এক নারী পর্যটক।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় আটটি এসি বাস ও দুটি জিপ নিয়ে দর্শনার্থী ও কর্মকর্তাদের পরিবহন সেক্টরের যাত্রা শুরু। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই বাসগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত মেরামত করেই এখন যানগুলো চালাতে হচ্ছে। একটি পর্যটক বাস গত বছরের ৫ আগস্টে সন্ত্রাসী হামলায় ভাংচুরের পর গেরেজে পড়ে আছে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণের জন্য ৭টি বাসের ৫টির এসি বিকল হয়ে আছে। তবে বিকল্প হিসেবে বাসে ছোট ছোট ফ্যান সংযোজন করা হয়েছে বলেন তিনি।

এ ছাড়া পার্কের প্রধান আকর্ষণ ‘কোর সাফারি’ এলাকায় চলাচলের রাস্তায় ছোট-বড় খানাখন্দ পর্যটকবাহী বাস চলাচল কিছু সমস্যা হলেও পার্কের রাস্তার কিছু অংশ ইতোপূর্বে সংস্কার ও মেরামত করা হয়েছে। বাকি অংশ বরাদ্দ পেলেই মেরামত করা হবে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেয়া খান বুধবার দুপুরে গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শনে এসে বলেছেন, পার্কের ভেতরে কোর সাফারি অংশে যে রাস্তা দিয়ে টুরিস্ট বাস চলাচল করে তার অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানে স্থানে স্থানে খানাখন্দ রয়েছে। এ রাস্তা মেরামত করা জরুরী। এছাড়া পর্যটক বাসে এসি না থাকা এবং বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবেন বলেন তিনি।

যাযাদি/ ০২ এপ্রিল ২০২৫

আরও - জাতীয় সংবাদ

আরও - জেলা সংবাদ