সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

সান্ডা খাওয়া নিয়ে কী বলছে ইসলাম

সান্ডা খাওয়া নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রায়ই জিজ্ঞাসা দেখা যায় – এটি কি ইসলামে হারাম নাকি হালাল? কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে আলেমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেহেতু কুরআন মাজিদে সরাসরি সান্ডা খাওয়ার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই, তাই এর বিধান নির্ধারণে হাদিস ও ফিকহি নীতি অনুসরণ করা হয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত মরুর দেশের প্রাণী সান্ডা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশগুলোতে বসবাসকারী বেশ কিছু বাঙালি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও দিচ্ছেন। সেখানে দেখা যায় তারা তাদের কফিলের জন্য সান্ডা ধরছে। এ সময় কেউ কেউ শেয়ার করছেন বিভিন্ন ছবি। যা নিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে এখানেই শেষ নয়, বানানো হচ্ছে নানা মিম।

সান্ডা কি?

সান্ডা হল আগামিডে পরিবারের টিকটিকিদের একটি গণ। আরবি ভাষায় এটিকে ‘দাব্ব’ (ضبّ) বলা হয়। এদের আদি নিবাস আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য (পশ্চিম এশিয়া)। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের সাধারণত কাঁটা লেজযুক্ত টিকটিকি, ইউরোমাস্টিকস, মাস্টিগুর, বা সান্ডা টিকটিকি নামে ডাকা হয়। এদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মোটা ও শক্তিশালী লেজ, যা কাঁটার মতো খাঁজযুক্ত এবং আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে অনেক দেশে সান্ডাকে ওষুধ বা শক্তিবর্ধক খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

সান্ডা খাওয়া নিয়ে নবী করিম (সা.) এর হাদীস?

নবী করিম (সা.)-এর সামনে একবার তার সাহাবীরা সান্ডা পরিবেশন করে। তখন তিনি সেটি খাননি। সে সময় তার সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি এটি খেতে অপছন্দ করেন, এটি হারাম?’

এই প্রশ্নের উত্তরে নবী করিম (সা.) বললেন- ‘এটি আমার কওমের খাদ্য নয়, তাই আমি খাই না।’
(সহীহ বুখারী: ৫৫৩৭, সহীহ মুসলিম: ১৯৪৪)

অর্থাৎ, এটি তিনি নিজে না খেলেও সাহাবীদের খেতে মানা করেননি। এমনকি সাহাবীরা তার সামনে এটি খেয়েছেন।

ফিকহবিদদের মতামত:

ফিকহবিদগণ এই সকল হাদীসগুলো বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধর্মে সান্ডা খাওয়ার হুকুম নির্ধারণ করেছেন।

হানাফি মাজহাব:

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন- সান্ডা খাওয়া মাকরূহ তাহরিমি। এর অর্থ, এটি না খাওয়াই উত্তম। কারণ এটা অরুচিকর একটি প্রাণী যা মানুষ সাধারণত খেতে চায় না।

শাফেয়ি, মালিকি ও হাম্বলি ধর্ম:

এই সব ধর্মের আলেমদের মতে, সান্ডা খাওয়া পুরোপুরি হালাল।

যদিও হাদিস অনুযায়ী, নবী (সা.) এটিকে নিষেধ করেননি, তাই এটা নিষিদ্ধ নয়।

সান্ডা খাওয়ার চিকিৎসাগত দিক:

বিশ্বের বহু দেশে সান্ডার তেলের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এবং যৌন শক্তি বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে এর তেল ব্যবহার করা হয়। যদিও বর্তমান আধুনিক চিকিৎসায় এটির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

তাহলে সান্ডা খাওয়া কি জায়েজ?

কুরআন এটি নিয়ে সরাসরি কোনও উল্লেখ নেই। হাদীসে রাসূল (সা.) এটি নিজে খাননি, তবে তা খেতে নিষেধও করেননি। সাহাবারা তার সামনে খেয়েছেন।

হানাফি ধর্মে- এটিকে মাকরূহ (না খাওয়াই ভালো) বলা হয়েছে।

অন্য ধর্মে- এটিকে হালাল ও জায়েজ।

চিকিৎসা ও ব্যবহার- তেল ওষুধ হিসেবে সান্ডা ব্যবহৃত হয়, তবে নিশ্চিত প্রমাণ সীমিত।

তাই বলা যায় সান্ডা খাওয়া হারাম নয়, বরং হালাল। তবে যদি কেউ এটি অপছন্দ করেন বা অরুচিকর মনে করেন, তাহলে না খাওয়াই উত্তম। ইসলামের মতে শরীরের ক্ষতি না হয়, এমন সকল কিছুই হালাল যদি না সেটি নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়।

সময়ের আলো ডেস্ক/১৫ মে, ২০২৫

আরও - ভিন্ন খবর

আরও - ইসলাম সংবাদ