সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

বাংলাদেশের বিশ্বতারকা আহমাদ বিন ইউসুফ

বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের অন্যতম বরেণ্য কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আযহারী। কীর্তি এবং অনন্যতায় বহু দিক থেকে যিনি তার বাবাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। বাবার স্বপ্নপূরণে কিরাতের ময়দানে তিনি অনন্য হয়ে উঠেছেন এবং হাল ধরেছেন বাংলাদেশের কিরাত অঙ্গনের।

২০০২ সালে মিসরের বিশ্বখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাআহাদুল কিরাতে পড়াশোনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কিরাতের ময়দানে পথচলা শুরু হয় শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফের। এ সময় মিসরের তৎকালীন বিখ্যাত কারিদের কাছে তালিম গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন শায়খদের থেকে থেকে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ব্যক্তি হিসেবে বিশুদ্ধ যে ১০টি মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক সনদবিশিষ্ট) কিরাত রয়েছে, সেগুলোর সনদ অর্জন করেন। তার আগে উপমহাদেশের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ কিরাতের সনদ অর্জন করেননি। তবে প্রসিদ্ধ যে সাতটি কিরাত (কিরাতে সাবআ), সেগুলোর সনদ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে একাধিক কারির ছিল।

২০০৯ সালে মিসর থেকে ফিরে কোরআনের বহুমুখী খিদমতে মনোযোগী হন। তারই অংশ হিসেবে ২০০৯-২০১০ সালে স্যাটেলাইট টেলিভিশন মাই টিভিতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সনদে তিনবার পূর্ণ কোরআনুল কারিমের ৩০ পারা তিলাওয়াত রেকর্ড করেন। পরিভাষায় সেই তিনটি রিওয়ায়েত ‘রিওয়ায়েতে ক্বলুন, রিওয়ায়েতে ওয়ারশ আন নাফে’ ও রিওয়ায়েতে বাজ্জি আন ইবনে কাসির’ নামে পরিচিত।

তারপর ২০১৪ সালে চ্যানেল আইতে এবং ২০২১-২০২২ সালে বৈশাখী টিভিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবচেয়ে বহুল প্রচলিত যে কিরাত ‘রিওয়ায়েতে হাফস’ সম্পূর্ণ ৩০ পারা রেকর্ড করেন। অর্থাৎ প্রথম কোনো বাংলাদেশি হিসেবে মোট পাঁচবার বাংলাদেশের জাতীয় টিভি চ্যানেলে পূর্ণ ৩০ পারা কোরআনুল কারিমের তিলাওয়াত রেকর্ড করেন।

মিসরের বিখ্যাত কারিরাও দু-তিনটির বেশি রিওয়ায়েতের কিরাত রেকর্ড করে যেতে পারেননি। কারি শায়খ আহমাদ বিন ইউসুফ আযহারী জানিয়েছেন, ‘তিনি এই অসাধ্যকে সাধন করার প্রতিজ্ঞা করেছেন; তিনি নিজ উদ্যোগে ১০টি কিরাতের ২০টি রিওয়ায়েতেই পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করতে চান। এরই মধ্যে গত রমজানে তার নিজ উদ্যোগে রেকর্ড করা ‘ক্বলুন আন নাফে’র রিওয়ায়েতটি সম্প্রচারিত হয়েছে।

শায়খ আযহারী এ পর্যন্ত অসংখ্য বৈশ্বিক সম্মান ও অনন্য সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০১১ সালে দুবাই আন্তর্জাতিক কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন, একই বছর জুনে ইরানে কোরআন প্রতিযোগিতায় কিরাত বিভাগের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। অতঃপর ২০১২ সালে তানজানিয়াতে ইস্ট আফ্রিকা কোরআন প্রতিযোগিতায় বিচারকের আসন লাভ করেন। এরপর ইরানসহ বিশ্বের বড় বড় আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন ও কিরাত প্রতিযোগিতায় একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার সুমধুর তিলাওয়াতে মুগ্ধ হয়েছেন বিশ্বের অসংখ্য মানুষ। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর মরক্কোর বাদশাহর আমন্ত্রণে রাজপ্রাসাদে কোরআন তিলাওয়াত করেন। ২০১৭ ও ২০২৪ সালে জর্ডানের বাদশাহর দাওয়াতে রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়ে দেশটিতে সফর করেন। ২০১৮ সালে ব্রুনাইয়ের বাদশাহ হাসানাল বলকিয়াহর আমন্ত্রণে রাজকীয় মজলিসে তিলাওয়াত করেন। একই বছর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ানের দাওয়াতে তুরস্কে কিরাত পড়েন। ২০২২ সালে নিউইয়র্ক ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে তার কিরাতে মুগ্ধ হন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। শায়খ আযহারী সেদিন পবিত্র জুমার আজান দেন, আর নামাজ-পূর্ব খুতবা দেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এ ছাড়া তিনি কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়াসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে বহুবার পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শোনানোর জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়— কিরাতের জগতে উপমহাদেশে তিনি অনন্য।

বেলায়েত হুসাইন
আমারদেশ/১৬ মে ২০২৫

আরও - ইসলাম সংবাদ