
-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে ইসলাম
সংরক্ষণ দিবস পালিত হয়। এই দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো প্রকৃতির রক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম উপায়টি বেছে নেওয়া।
এ দিবসটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমরা আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছি। উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিনিয়ত বৃক্ষনিধন প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত করছে। নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে পাখিসহ বিভিন্ন উদ্ভিদনির্ভর প্রাণীর আশ্রয়স্থল ধ্বংস হচ্ছে, পরিবেশে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃৃদ্ধি পাচ্ছে, জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে যা আগামী দিনে আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। ব্যাপক হারে নগরায়ণ এবং শিল্পায়নের ফলে কলকারখানা এবং গৃহস্থালির বর্জ্য যথাস্থানে না ফেলা, অধিক হারে যানবাহন ব্যবহার, খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার, নদী ভরাট, কাজের জন্য গ্রামীণ মানুষদের শহর অভিমুখী হওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ব্যাপক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।
পবিত্র কুরআনে পৃথিবীর মানুষকে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন। অতঃপর বায়ু মেঘমালাকে সঞ্চালন করে। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা বৃষ্টি পৌঁছান। তখন তারা আনন্দিত হয়’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪৮)। আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে সৃষ্টি করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ।’ কুরআনে মানুষের জন্য আল্লাহ পাকের অসংখ্য নেয়ামত প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি, অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিদীর্ণ করি এবং আমি উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জাইতুন, খেজুর, বহু বৃক্ষ, বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদির খাদ্য, এটা তোমাদের এবং তোমাদের পশুগুলোর ভোগের জন্য।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)
কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে এর বিচিত্র প্রকার বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ পুলকিত ও অভিভূত হয়। যেন সবকিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তা (পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জাইতুন, খেজুর গাছ, আঙুরসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১১)। বনের গাছপালা থেকে শুধু কাঠ, রাবার, ওষুধ বা ফলমূলই সংগ্রহ করা হয় না, এগুলো থেকে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি দ্রব্য এবং তেলও পাওয়া যায়। বৃক্ষের পরিশুদ্ধ তেল দ্বারা প্রজ¦লিত প্রদীপের সঙ্গে আল্লাহ পাক তাঁর নূরের উপমা দিয়েছেন। মানুষ চেষ্টা-গবেষণা করলে বৃক্ষ থেকেও উৎকৃষ্ট ধরনের তেল আহরণ করতে পারে। এই উপমা নিঃসন্দেহে সেই তথ্যের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় ভোজনকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।’ (সুরা মুমিনুল, আয়াত : ২০১)
বন ও বন্য পশুপাখি আল্লাহ পাকের দান ও প্রকৃতির শোভাবর্ধক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলোর সংরক্ষণের ওপরও বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মক্কা-মদিনায় একটি বিশেষ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছিলেন। ওইসব এলাকায় গাছপালা কাটা এবং সেখানে বন্য পশুপাখি শিকার করা আজও নিষিদ্ধ। মুসলিম বিজয়ীরা যে দেশে গেছেন সে দেশকে গাছপালা দ্বারা সবুজ করে তোলার চেষ্টা করেছেন। প্রধানত, কুরআন ও হাদিস শরিফ থেকেই তারা এ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন। মুসলিম ইতিহাসে এর যথেষ্ট নজির রয়েছে।
কৃষির উন্নয়ন ও সংরক্ষণের প্রতি মুসলিম খলিফাগণ সবসময় সজাগ ও সচেষ্ট ছিলেন। সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ ও মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত হতে পারে না। বনভূমি ও পশুপাখি আল্লাহ তায়ালার অকৃত্রিম দান ও প্রকৃতির অনিন্দ্য শোভাবর্ধক। তাই রাসুল (সা.) প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য অতীব প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। এ জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে দুনিয়াজুড়ে আজ সম্মিলিত রব উঠেছে। কিন্তু কিছু মানুষের অদূরদর্শিতা ও অমানবিক আচরণের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।
অথচ প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে ইসলামের মৌলনীতি হলো, প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টির কোনোরূপ ধ্বংস বা বিনাশ, অপচয় বা অপব্যবহার করা সমীচীন নয়। কেননা প্রতিটি সৃষ্টিই কোনো না কোনোভাবে মানুষ বা অন্য কোনো সৃষ্টিকে সেবাদানে সদা অবিচল। এ জন্য পরিবেশ ধ্বংসের যেকোনো ধরনের উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা মানুষসহ অন্যান্য সৃষ্টিকে আল্লাহ প্রদত্ত সেবা থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর। তাই বিনা প্রয়োজনে অযৌক্তিকভাবে সৃষ্টিকে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত না করা প্রকৃত মুমিনের পরিচায়ক।
আরও - স্বাস্থ্য সংবাদ
হাদিসের বর্ণনায় কালিজিরা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক ও
যে ৫ অভ্যাস কিডনি সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়
কিডনির রোগ ইদানীং বেড়ে গেছে। কিডনিতে পাথর, পানি জমে যাওয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
যে কারণে খাদ্যতালিকায় চিনাবাদাম রাখা জরুরি
যুগান্তর/অনলাইন/ ১৫ জুলাই ২০২৪
চিনাবাদাম আমাদের দেখে খুব পরিচিত একটি খাবার। গল্প, আড্ডা, সিনেমা