সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

৩০ মাসে ২৫ বার সন্তান প্রসব কৃষ্ণার, ঘটনার নেপথ্যে কী

৩০ মাসে মোট ২৫ বার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন একজন নারী! সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশের আগড়া জেলার একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের রেকর্ড ঘেটে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্য জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায় ভারতজুড়ে। পরে এ নিয়ে তদন্তে নামেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জালিয়াতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে উত্তর প্রদেশের আগরা জেলার ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।

সেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রেকর্ড হাতড়ে জানা গেছে, মাত্র ৩০ মাসের মধ্যে ২৫ বার ‘সন্তান প্রসব’ করেছেন এক মহিলা। শুধু তা-ই নয়, ওই সময়ের মধ্যে পাঁচবার বন্ধ্যত্বকরণও ‘করিয়েছেন’ তিনি। তদন্তে উঠে আসে যে, মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা হাতানোর জন্যই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভুয়া নথি জমা দিয়েছিলেন ওই মহিলা। সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদনে সেই ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।

‌‘তোমার মহারানী তানিয়াকে নিয়ে ভালো থেকো’- চিরকুট লিখে যুবতীর আত্মহত্যা
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জালিয়াতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই মহিলার নাম কৃষ্ণা কুমারী। নাগলা কদম গ্রামের বাসিন্দা তিনি। মজার বিষয় হলো তাকে ধরতে গিয়ে অবাক হয়ে যায় পুলিশ।

তদন্ত করে দেখা যায়, কৃষ্ণা কুমারীর নামে যে জালিয়াতি হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো ধারণা নেই তার।

আসলে তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চলছিল দুর্নীতি। সম্প্রতি এক অডিটে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (ন্যাশনাল হেলথ মিশন) প্রকল্প, বিশেষ করে জননী সুরক্ষা যোজনা এবং মহিলা বন্ধ্যত্বকরণ প্রণোদনা প্রকল্পের অধীনে অনিয়ম দেখার পর জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

সরকারি ওই যোজনার আওতায় সন্তান জন্ম দেওয়া এবং বন্ধ্যত্বকরণ করানোর জন্য আর্থিক সহায়তা করে সরকার। আর সেই টাকা হাতাতেই কৃষ্ণার পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হচ্ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভুয়ো নথি ব্যবহার করে প্রথমে কৃষ্ণার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল।

সেই অ্যাকাউন্টেই জমা পড়ত সরকারি প্রকল্প থেকে পাওয়া টাকা। তার থেকে ৪৫,০০০ টাকারও বেশি টাকা তুলে নিয়েছিল জালিয়াতরা। এর পরেই ঘটনাটি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত চালিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে চারজন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী এবং এক জন কৃষ্ণার গ্রামের এক যুবক। তাদের মধ্যে তিন জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এফআইআরে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গৌরব থাপা (ব্লক প্রগ্রাম ম্যানেজার), নীরজ অবস্থি (ব্লক অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজার), গৌতম সিংহ (ডেটা এন্ট্রি অপারেটর), আজহার আহমদ (ডেটা এন্ট্রি অপারেটর) এবং অশোক কুমার (কৃষ্ণার গ্রামের বাসিন্দা)।

এর মধ্যে অশোকই কৃষ্ণার নামের ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। আগরার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অরুণ শ্রীবাস্তব নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্ত চার স্বাস্থ্যকর্মী ফতেহাবাদ কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করছিলেন।

অরুণ সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘একই রকমের অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা নির্ধারণের জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। বিভাগীয় কর্মীরা জড়িত না থাকলে এমন জালিয়াতি ঘটত না।’

কর্মকর্তাদের মতে, জাল তথ্য এবং ভুয়া চিকিৎসা রেকর্ডের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের অপব্যবহারের একটি চক্র অনেক দিন ধরেই সক্রিয়। সরকারের সন্দেহ, চিকিৎসক, প্রশাসনিক কর্মী, নার্সরাও ওই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।

যাযাদি ডেস্ক/১৫ এপ্রিল, ২০২৫

আরও - আন্তর্জাতিক সংবাদ

আরও - লাইফ স্টাইল সংবাদ