সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

যেসব কারণে স্বর্ণে বিনিয়োগ সবচেয়ে নিরাপদ

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণকে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের সময়ে স্বর্ণের মূল্য সাধারণত স্থিতিশীল বা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। যার কারণে অর্থের সবচেয়ে স্থায়ী রূপ বলা স্বর্ণকে।

এছাড়া হাজার বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, দীপ্তি আর চাকচিক্য মানুষকে অভিভূত করে চলেছে। হয়তো সে কারণেই এর মূল্য কখনো শূন্যে নামেনি। বরং দিন যতো যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে এর মূল্য।

বাংলাদেশেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বর্ণ ধারাবাহিকভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তবে স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা মাধ্যম রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভিন্ন সুযোগ ও সুবিধা প্রদান করে।

সোনা ২০২৫ সালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। কারণ এ বছর ইতিমধ্যে ২০ বার সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে। মাঝেমধ্যে কিছুটা কমে গেলেও তা ছিল ক্ষণস্থায়ী এবং সীমিত। সোনা ঐতিহ্যগতভাবে একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় যা মুদ্রার মান কমে গেলেও তার মূল্য ধরে রাখে।


স্বাভাবিক সময়ে সোনা প্রতি আউন্সে ৪০ ডলার দামের রেঞ্জে লেনদেন হলেও অস্থির সময়ে তা ১২০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে, বিশেষ করে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পর থেকে। বিশ্বব্যাপী ব্যাংকগুলো শুধু ২০২৫ নয়, আগামী ৪–৫ বছর পর্যন্ত সোনার দামের বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

সিএনবিসি টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২,৬৫০ ডলার, যা বর্তমানে ৩,২০০ ডলারেরও বেশি। এপ্রিলে কিছুটা দাম কমে ২,৯৫৫ ডলারে নেমেছিল।

তবে এই স্তরের নিচে দাম নামলেও তা ২,৮০০ বা এমনকি ২,৬০০ ডলারে যেতে পারে—যা অনেক বিশেষজ্ঞের মতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ভালো সুযোগ।

এখনকার বাজারে সোনার মূল্য নিয়ে প্রচলিত বইয়ের বিশ্লেষণগুলোও আর কাজ করছে না। ২০২৪ সালে সোনার দাম প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়েছে, এমনকি তখনো যখন ডলার সূচক ও শেয়ার বাজার ভালো ছিল। ২০২৫ সালে মার্চে সোনার দাম ১০% এবং এপ্রিলেই ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক স্থগিত করেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫% করেছেন। তার এই কঠোর পদক্ষেপে একটি বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, কারণ বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।

এখন দেখে নেওয়া যাক যে ১০টি কারণে ২০২৫ সালে সোনায় বিনিয়োগ করা গুরুত্বপূর্ণ:

শুল্ক যুদ্ধ: পারস্পরিক শুল্কের কারণে বাজারে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। আগামী ৯০ দিন এবং ভবিষ্যতের যেকোনো পরিবর্তন সোনাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়: গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বার্ষিক ১,০০০ টনের বেশি সোনা কিনেছে।

মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা: মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ নথিতে মুদ্রাস্ফীতির যুগপৎ উপস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে—যা সোনার জন্য ইতিবাচক।

চীনে ইটিএফ বিনিয়োগ: চীনা সোনা ইটিএফ-এ ২০২৫ সালে রেকর্ড ১ ডলার বিলিয়ন বিনিময় হয়েছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সুদহার হ্রাস: ২০২৫ সালে ফেড আরো দুবার সুদের হার কমাতে পারে, যা সোনার দামের জন্য সহায়ক।

নিয়মিত রিটার্ন: ২০০০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সোনা মাত্র দুই বছর বড় নেতিবাচক রিটার্ন দিয়েছে।

ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা: রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল–হামাস সংঘর্ষ ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সোনার চাহিদা বাড়াচ্ছে।

মুদ্রার ওঠানামা: ডলার সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে রয়েছে, বিশেষ করে সিএইচএফ, জেপিওয়াই ও ইউরোর তুলনায়—যা সোনাকে সস্তা করছে।

ঋণের পাহাড়: ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে মার্কিন জাতীয় ঋণ ৩৬ ডলার ট্রিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এই ঋণ পরিস্থিতি সোনাকে একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে তুলে ধরছে।

বাজারে অস্থিরতা: ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজার দুর্বল পারফর্ম করছে। কিন্তু যারা সোনা কিনেছেন, তারা লাভবান।

যেমনটা বলা হয়— ‘সোনা সম্পদ তৈরি করে না, সোনাই সম্পদ।’ কাগুজে মুদ্রার বিপরীতে সোনা একটি বাস্তব সম্পদ যার নিজস্ব মূল্য রয়েছে। এসব কারণে জনগণের মধ্যে সোনার প্রতি আস্থা বাড়ছে এবং সোনা সংক্রান্ত আর্থিক পণ্যের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।

যুগান্তর ডেস্ক/১৭ এপ্রিল ২০২৫

আরও - জাতীয় সংবাদ

আরও - আন্তর্জাতিক সংবাদ