সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

হজ ফরজ যাদের ওপর

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হজ। নামাজ-রোজা যেমন সব ধরনের মুসলমানের ওপর ফরজ, হজ তেমন নয়। হজ ও জাকাত ফরজ হয় সচ্ছল মুসলমানদের ওপর। সচ্ছলতা ছাড়াও হজের আরও কিছু ফরজ রয়েছে। নামাজ, রোজা, জাকাত ইবাদতগুলো ফরজ হওয়ার জন্য যেমন কিছু শর্ত রয়েছে, ঠিক তেমনি হজ ফরজ হওয়ার জন্যও কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেই শর্তগুলো পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর হজ করা ফরজ। যদি শর্তগুলো পাওয়া না যায়, তা হলে তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ নয়। মুসলমানদের জন্য হজের শর্তাবলি জানা আবশ্যক। এখানে হজের শর্তগুলো তুলে ধরা হলো।

মুসলমান হওয়া : কাফের, মুশরিক ও পৌত্তলিকদের ওপর হজ করা ফরজ নয়। পবিত্র কুরআনে অবিশ্বাসী কাফেরদের অপবিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের মসজিদে হারামের কাছে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা অপবিত্র। সুতরাং এ বছরের পর তারা যেন মসজিদুল হারামের কাছে না আসে। আর যদি তোমরা দারিদ্র্যের আশঙ্কা করো, তবে আল্লাহ চাইলে নিজ করুণায় ভবিষ্যতে তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ২৮)

জ্ঞানবান হওয়া : জ্ঞানহীন পাগল ব্যক্তিদের ওপর হজ ফরজ নয়। কেননা হজ আদায়ের জন্য ইচ্ছা ও নিয়তের প্রয়োজন। আর ইচ্ছা ও নিয়ত কোনো পাগল ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিন প্রকার ব্যক্তি থেকে কলম (বিধান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে-
১. নিদ্রিত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়
২. অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়
৩. উন্মাদ ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা রোগমুক্ত হয়।’ (নাসায়ি : ৩৪৩২)

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া : অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুর ওপর হজ করা ফরজ নয়। তবে কোনো শিশু যদি হজ আদায় করে, তা হলে তা সহিহ হবে এবং সে এর সওয়াব পাবে। অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সমুদয় শর্ত পাওয়া গেলে তাকে পুনরায় ফরজ হজ আদায় করতে হবে। কেননা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগের হজ তার ফরজ হজকে রহিত করতে পারে না। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যদি কোনো শিশু দশবারও হজ আদায় করে, তা হলেও তাকে জ্ঞানবান ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ইসলামের আরোপিত হজ আদায় করতে হবে।’ (মুসনাদে হারেস, হাদিস : ৩৫৭)

স্বাধীন হওয়া : পরাধীন কোনো দাস-দাসীর ওপর হজ ফরজ নয়। পরাধীন থাকা অবস্থায় কোনো গোলাম যদি হজ আদায় করে তা হলে তা সহিহ হবে। তবে আজাদ হওয়ার পর হজের সব শর্ত পাওয়া গেলে তাকে পুনরায় ফরজ হজ আদায় করতে হবে। কেননা গোলাম থাকা অবস্থায় আদায়কৃত হজ তার ফরজ হজের জন্য যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, ‘যদি কোনো গোলাম দশবারও হজ আদায় করে তা হলেও তাকে আজাদ হওয়ার পর ইসলামের আরোপিত হজ সম্পাদন করতে হবে।’ (মুসনাদে হারেস, হাদিস : ৩৫৭)

সামর্থ্যবান হওয়া : সামর্থ্যবান হওয়ার অর্থ হলো আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া। আর্থিক দিক থেকে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির কাছে মধ্যমপন্থায় বায়তুল্লাহর সফরে ব্যয় করার মতো প্রয়োজনীয় সম্পদ থাকা; যা তার বাসস্থান, গৃহের ফার্নিচার, অধ্যয়নের প্রয়োজনীয় গ্রন্থাদি ও ঋণ পরিশোধের ব্যয় থেকে অতিরিক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়তুল্লাহর সফর থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তার পরিবার-পরিজনের আবশ্যকীয় ব্যয় ও হজের পরবর্তীতে তার এবং পরিবার-পরিজনের অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় বহনে যথেষ্ট হয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা মানে না (তার জানা উচিত) আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

নারীর সঙ্গে মাহরাম থাকা : কোনো নারীর সঙ্গে যাওয়ার মতো মাহরাম যদি না থাকে, তা হলে তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ নয়। মাহরাম ছাড়া সফর করতে বিশ্বনবী (সা.) নিষেধ করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, সঙ্গে মাহরাম পুরুষ না থাকা অবস্থায় কোনো পুরুষ লোক যেন কোনো মহিলার সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ না করে। কোনো স্ত্রীলোক যেন কোনো মাহরাম ছাড়া একাকী সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ওঠে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্যবাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে- যা অমুক স্থানে যুদ্ধে যাবে। মহানবী (সা.) বললেন, তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ করো। (মুসলিম : ৩১৬৩)

যদি কোনো ব্যক্তির মধ্যে উল্লিখিত শর্তগুলো পাওয়া যায়, তা হলে তার ওপর অবিলম্বে হজ আদায় করা ফরজ। এমন ব্যক্তির জন্য হজ আদায়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। কেননা হজ ফরজ হওয়ার পর যদি তা আদায়ে বিলম্ব করা হয়, আর হজ না করা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়ে যায় বা দরিদ্র হয়ে যাওয়ার কারণে তার হজ করার সক্ষমতা চলে যায়, তা হলে সেই ব্যক্তি হজ না করার অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবে। এ কারণে তাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মাজিদুর রহমান
সময়ের আলো/১৮ এপ্রিল, ২০২৫

আরও - খেলাধুলা সংবাদ