-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
ফিলিস্তিনি বন্দির কেউ ফিরলেন ঘরে, কেউ নির্বাসনে
ইসরায়েলের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের স্বাগত জানাতে সোমবার সকালেই পশ্চিম তীর জুড়ে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। বহু পরিবার ভোর থেকেই রাস্তায় অপেক্ষা করছিল প্রিয়জনকে বরণ করার জন্য। দুই দিন আগে আশা নিয়ে রামাল্লাহ এসেছিলেন ইবতিসাম ও তার ভাই রায়েদ ইমরান। ইসরায়েলি কারাগার থেকে তাদের ভাই মোহাম্মদ আহমদ ইমরান ফোন করে জানিয়েছিলেন, তিনি মুক্তি পাওয়া বন্দিদের তালিকায় আছেন এবং পশ্চিম তীরে ফিরবেন।
কেউ কেউ বহু বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, কেউ বা আজীবন কারাদণ্ড কাটিয়ে ফিরছেন ঘরে। আবার অনেকে ছিলেন গাজায় চলমান ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় নির্বিচারে গ্রেফতার হওয়া বন্দিদের তালিকায়।
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রামাল্লাহ কালচারাল সেন্টারে দিনটি পরিণত হয়েছিল আনন্দ ও আবেগের মিলনমেলায়। তবে ভিড়ের মধ্যে এক পরিবারের কান্না ছিল অন্যদের চেয়ে গভীর। হেবরনের বাসিন্দা মোহাম্মদ আহমদ ইমরানের পরিবার।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হওয়া ইমরানকে ইসরায়েলি আদালত ১৩টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। তার নাম মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের তালিকায় দেখে পরিবার আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আসে নির্মম খবর। ইসরায়েল ইমরানকে ঘরে ফিরতে দিচ্ছে না, বরং তাকে নির্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
একদিকে, যখন হাজারো পরিবার মুক্ত প্রিয়জনকে বুকে জড়িয়ে ধরছে, তখন ইমরানের পরিবার দাঁড়িয়ে আছে চোখের জলে, ভাঙা স্বপ্নের ভার নিয়ে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল যে ২৫০ জন রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে তাদের ১৫৪ জনকেই ফিলিস্তিনের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। রায়েদ ইমরান এখনো অবিশ্বাসে ভুগছেন। তিনি বলেন, আমি একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার ফোন পাই। তিনি বলেন, আমরা যেন কোনো আনন্দ প্রকাশ না করি বা কাউকে আমন্ত্রণ না জানাই।
এমন সতর্কবার্তা ও হুমকি ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর কাছে নতুন কিছু নয়। কারো প্রিয়জন মুক্তি পেলেও ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই তাদের হুমকি দেয়- যদি কেউ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, তবে গ্রেফতার বা সহিংসতার মুখে পড়তে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ আসলে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি। দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক তামার কারমাউত আলজাজিরাকে বলেন, এই নির্বাসনের আদেশগুলো আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ বাধ্যতামূলক স্থানচ্যুতির শামিল।
নির্বাসিত বন্দিরা যেসব দেশে পাঠানো হবে, সেখানে তাদের চলাফেরায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপরন্তু, ইসরায়েলের আরোপিত ভ্রমণ সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের পরিবার হয়তো আর কখনো তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।
১৪ অক্টোবর, ২০২৫