
-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
মিথ্যা ও পরনিন্দায় রোজা নষ্ট হয়
মানুষ কথাবার্তা ও গল্পগুজব ছাড়া থাকতে পারে না। আর কথার ফাঁকে অন্যের নিন্দা-গিবত হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। রোজা অবস্থায় গিবত থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রমজান মাসে রোজা অবস্থায় কেউ গিবত বা মিথ্যাচার করলে তার ভয়াবহতা সাধারণ যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
মিথ্যাচার ও গিবতের কারণে রোজা ভেঙে যায় না ঠিক, তবে রোজার সওয়াব ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘রোজা হলো (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার) ঢাল স্বরূপ, যে পর্যন্ত না তাকে বিদীর্ণ করা হয়। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ, কীভাবে রোজা বিদীর্ণ হয়ে যায়? রাসুল (সা.) বললেন, মিথ্যা বলার দ্বারা অথবা পরনিন্দা করার দ্বারা’ (নাসায়ি : ২২৩৫)। গিবত বা পরনিন্দার পরিচয় দিয়েছেন নবীজি (সা.)।
তিনি বলেন, ‘পরনিন্দা হলো কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা, যা শুনলে সে অসন্তুষ্ট হয় এবং অন্তরে আঘাত পায়, তাকেই গিবত বলে। অর্থাৎ কারও অগোচরে তার এমন দোষ বলা, যা বাস্তবেই তার মধ্যে আছে, তাই গিবত বা পরনিন্দা। আর যদি তার মধ্যে সেই দোষ না থাকে, তবে তা হবে অপবাদ; যা পরনিন্দা থেকেও মারাত্মক গুনাহ’ (মুসলিম : ২৫৮৯)।
এর ভয়াবহতার ব্যাপারে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পরনিন্দা ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ। এক সাহাবি জানতে চাইলেন, এটা কীভাবে? নবীজি (সা.) বললেন, এক ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু যে গিবত বা পরনিন্দা করে, তার গুনাহ প্রতিপক্ষ মাফ না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’ (তিরমিজি : ২৪১২)
আর মিথ্যাচার এমন এক ঘৃণ্য বদস্বভাব যার কারণে ইহকাল ও পরকালের ধ্বংস নিশ্চিত হয়ে যায়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা মিথ্যাচার বর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো’ (সুরা আল-হজ: ৩০)। তিরমিজি শরিফের ১৯৭১ নম্বর হাদিস অনুযায়ী কেউ প্রতিনিয়ত মিথ্যা বলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহ তায়ালার দরবারে চরম মিথ্যাবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। আল্লাহর রহমত অপরিসীম হলেও মিথ্যাবাদীদের তিনি হেদায়েত দেন না।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে হেদায়েত দেন না যে সীমা লঙ্ঘনকারী, মিথ্যাবাদী’ (সুরা গাফির : ২৮)।
রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে রোজার গুণাগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করে না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার বর্জনের কোনো কার্যকারিতা নেই’ (বুখারি : ৬০৫৭)।
সুতরাং রোজা রেখে মিথ্যা, গিবত, কড়া কথা, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। কারও ব্যাপারে নিন্দা করে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। যদি সে জীবিত না থাকে তা হলে তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা।
আবরার নাঈম
সময়ের আলো অনলাইন/৫ মার্চ, ২০২৫