সেই ২০০০ সাল থেকে স্বচ্ছতার সাথে পথচলা...

ফিতরা প্রদানে সর্বোত্তম বিবেচনা

‘ফিতরা’ প্রদান করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নিজের রোজাকে ত্রুটিমুক্ত ও অসহায়-গরিবদের ঈদকে আনন্দময় করতে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদানের বিধান এসেছে। ঈদুল ফিতরের আগে আগে আমরা ফিতরা প্রদান করে থাকি। তবে সমাজের বাস্তবতা অনুধাবন করে ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণে বড় মনের পরিচয় খুবই কম জনই দিয়ে থাকি। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ফিতরা প্রদানের দায় সারতে চাই!

মূলত প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি- যিনি স্বাধীন এবং যার কাছে ঈদুল ফিতরের দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা কিংবা সমমূল্যের ব্যবসা পণ্য অথবা নগদ টাকা থাকবে- তিনি নিজের ও পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করবেন। ফিতরা প্রদানের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন ঈদের জামাতে যাওয়ার পূর্বে। তবে এর কয়েক দিন আগেও ফিতরা প্রদান করা যাবে।

জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটি এ বছর জনপ্রতি ফিতরার হার সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সাধারণত দেখা যায়- সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত- সবাই গতানুগতিক নির্ধারিত পরিমাণেই বিশেষ করে সর্বনিম্ন পমিাণে ফিতরা আদায় করে দায় সারার চেষ্টা করেন। অথচ বিষয়টি এমন নয়! হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল- যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর’ (বুখারি : ১/২০৪)। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ।’ (বুখারি : ১/২০৫)

হাদিস দুটি থেকে বোঝা যায়, খাদ্যবস্তু তথা আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটির মাধ্যমে ফিতরা প্রদান করা যায়। যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে এক সা তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আর আটার ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে অর্ধ সা বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। এই পণ্যগুলোর আবার বাজার মূল্য এক নয়। অর্ধ সা আটার মূল্য যদি ১১০ টাকা হয়, যব দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৫৩০ টাকা, কিশমিশের মাধ্যমে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১৯৮০ টাকা, খেজুরের হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য হয় ২৩১০ টাকা এবং পনির দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২৮০৫ টাকার মতো আদায় করতে হয়। তার মানে পণ্য হিসেবে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ, তিনগুণ বা তারচেয়েও বেশি হবে। অথচ আমাদের সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত অধিকাংশই নিজের ফিতরা প্রদানে সর্বনিম্ন মূল্যের আটাকে (জনপ্রতি ১১০ টাকা) বেচে নেন। এতে ফিতরা হয়তো আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু যে অর্থে ফিতরা দেওয়া হয়- তথা গরিবদের ঈদকে আনন্দময় করা- সেটি কি অর্জন হবে? ১১০ টাকার মাধ্যমে একজন গরিব কি স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন? তা হলে ধনীরাও কেন ফিতরা আদায়ে আটাকে বেছে নিচ্ছেন। যারা অঢেল সম্পদের মালিক, নিজেদের ঈদ উদযাপনে যারা হাজার হাজার (কখনো লাখ) টাকা ভাঙতে কার্পণ্য করেন না- তারা কেন যব, খেজুর, পনির বা কিশমিশের হিসেবে একটু বেশি ফিতরা দিচ্ছেন না? কেন দায়সারা ফিতরা আদায়েই ক্ষ্যান্ত থাকছেন? আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দিন। অসহায়-গরিবদের সহযোগিতায় সর্বোত্তম বিবেচনা দিন।

মুফতি আমিন ইকবাল
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক

সময়ের আলো অনলাইন/১২ মার্চ, ২০২৫

আরও - ইসলাম সংবাদ