
-
Facebook
-
Twitter
-
Linkedin
তেলের দাম কমায় কমবে বিমান ভাড়া
অ্যাভিয়েশেন খাতের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা। গত মঙ্গলবার জেট ফুয়েলের দামের সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। বিইআরসি এক আদেশে জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ রুটের প্রতি লিটার জ্বালানির দাম ১৭ টাকা ৪৩ পয়সা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩ টাকা ৫৭ পয়সা। আগে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ১৯ টাকা।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রুটের জন্য প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম কমেছে ১৫ সেন্ট। এতদিন প্রতি লিটার জ্বালানির জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে গুনতে হতো ৭৫ সেন্ট। এখন তা মিলবে ৬০ সেন্টে। এমন খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।
এয়ারলাইন্সগুলোর দাবি, বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে জ্বালানি বা জেট ফুয়েলের দাম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। ফলে সেই দেশগুলোর সঙ্গে ভাড়ার প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না দেশি এয়ারলাইন্সগুলো। উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম কমানো অ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য স্বস্তির খবর। এখন শিগগিরই টিকেটির দামও যৌক্তিকভাবে কমানো হবে। তবে একটু সময় লাগবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উড়োজাহাজের খরচের ৫০ শতাংশের বেশি জ্বালানি তেলের মূল্য পরিশোধে ব্যয় হয়। যার প্রভাব পড়ছে টিকেটের দামে। দেশে তেলের দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে তেল নিতে চায় না। তারা অন্য দেশ থেকে তেল নিয়ে কস্ট ম্যানেজমেন্ট করে। দেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অজানা কারণে বিগত সময়ে দাম কমানো হয়নি। নিয়ম না থাকলেও বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) দাম নির্ধারণের সুযোগ দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। শুধু বিপিসি নয় একাধিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তেল বিক্রির দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের মহাপরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, জেট ফুয়েল বিমানের অপারেশন কস্টের ৫০ শতাংশ। এটা যতক্ষণ পর্যন্ত না কমানো হবে ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। বিগত সরকারের সময়ে অযৌক্তিকভাবে দাম না কমিয়ে বিপিসিকে মুনাফা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন সময় বদলেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, ভাড়া কমবে। তবে একটু সময় লাগবে। অপারেশন কস্টের সঙ্গে ক্যালকুলেশন করে তারপর সমন্বয় করতে হবে। যখন জেট ফুয়েলের দাম বাড়ে তখনও একটু সময় নিয়েই ভাড়া সমন্বয় করা হয়। তবে জ্বালানির দাম পজিটিভ একটি প্রভাব তো পড়বেই।
তিনি জানান, একটি ফ্লাইটের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে জ্বালানির পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, প্রকৌশলীর খরচ, উড়োজাহাজের অবচয় খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও ক্যাটারিংসহ আরও কয়েকটি উপাদান।
কামরুল বলেন, এখন ট্রাভেলিংয়ের জন্য অফ সিজন চলছে। অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে যাত্রী আগের চেয়ে অনেক কম। এর একটি বড় কারণ এখন সড়ক ও রেল যোগাযোগের অবস্থা ভালো। তারপর অনেক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী যাত্রী যারা আগে নিয়মিত যাতায়াত করতেন, সে সংখ্যাটা কমে এসেছে। আর আন্তর্জাতিকের কথা যদি বলি, দুবাইয়ে পর্যটক ভিসা বন্ধ, থাইল্যান্ডে ভিসায় নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তারপর ভারতে একেবারেই বন্ধ। আগে যেখানে সপ্তাহে ৩২টা ফ্লাইট চলত, এখন চলে মাত্র ৬টা।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, জেট ফুয়েলের দাম কমায় এয়ারলাইন্সগুলো কিছুটা স্বস্তি পাবে। অল্পকিছু দিনের মধ্যেই টিকেটের দামও কমবে। এটা অ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য সুখবর। সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার মতোই একটি কাজ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদে স্বস্তি আসবে।
কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, টিকেটের দাম এখনই হয়তো কমবে না। জ্বালানির দাম একটা ফ্যাক্টর। এটা কিছুটা স্বস্তি দেবে। আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, টিকেটের দাম কিন্তু গত বছরের তুলনায় এখন কম। সরকার যেমন বলছে তারা ইন্টারভেনশন করেছে তাই কমেছে। এটা একটা কারণ তবে একমাত্র নয়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এখন অনেক দেশে ভিসা দিচ্ছে না। যেমন দুবাইয়ে বন্ধ, সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসা বন্ধ, থাইল্যান্ডে জটিলতা আর সময় লাগছে বেশি। আর ভারত তো বন্ধই। এতে বিদেশগামী যাত্রী অনেক কমে গেছে। কিন্তু ফ্লাইট সেভাবে কমেনি। সোজা কথায় যাত্রী কম আসন বেশি।
টিকেটের দাম সহসা অনেক কমে না যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্যান্য যে সরকারি ফি রয়েছে সেগুলো কিন্তু কমেনি। যেমন অ্যারোনটিক্যাল ও নন অ্যারোনটিক্যাল চার্জ তো কমেনি। এগুলো সমন্বয় হলে টিকেটের দাম কমবে। আবার এয়ার টিকেটের দাম নির্ধারণ হয় ডলারে। তাই ডলারের দাম ওঠানামা করলে তার একটা প্রভাব পড়ে। তার ওপর আছে ভ্যাট ও ট্যাক্স। কাজী ওয়াহেদুলের মতে, এই ফি ও চার্জগুলের কমে এলে টিকেটের দামও কমে আসবে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবির ভূইয়া সময়ের আলোকে বলেন, জেট ফুয়েলের দাম কমেছে, এখন টিকেটের দামও শিগগিরই কমবে। উড়োজাহাজের অন্য যে চার্যগুলো রয়েছে সেখানে অসংগতি আছে কি না সেটা দেখা হচ্ছে। বাড়তি থাকলে কমানো হবে। এ জন্য কমিটি কাজ করছে।
উল্লেখ্য, এতদিন বিপিসি নির্ধারণ করে আসছিল এই পণ্যটির দাম। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের ধারা বাতিল করে দিয়েছে। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফার্নেস অয়েল, জেট এ-১-এর দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের পর গত ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি।
বিপিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫ মে. টন। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ মে. টনে।
রফিক রাফি
সময়ের আলো/১৫ মে, ২০২৫